পায়ে হেঁটে বাংলাদেশ ভ্রমণ: বাংলাবান্ধা থেকে শাহপরীর দ্বীপ
পর্ব ৫: বাংলার মাঠ ঘাঠ প্রান্তরে
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
পরের দিন চান্দিনা। মানে ৮ মার্চ। ২০১৬। কৃষিভিত্তিক কুমিল্লার পরিচয়কে স্বার্থক করে দিলো আলু, টমেটা আর বাঙ্গিক্ষেত। উত্তরবঙ্গের মতো এখানেও কৃষকের সাথে কথাবলে হেসে খেলে সময় কেটে যাচ্ছিলো। বলছিলাম পায়ে হেঁটে দেশভ্রমনের সংক্ষিপ্ত স্মৃতি। আজ পঞ্চম পর্ব। সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকবে এতে। পুরো সফল বিবরনী জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী বইমেলা পর্যন্ত।
কিন্তু সমস্যা বাঁধলো গন্তব্যে পৌছা নিয়ে। কারণ এতদিন দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার হাটছিলাম। এখন গরমটা প্রচন্ড বাঁধা হয়ে আসছিলো কিন্তু দিনের ক্ষতিটা সন্ধার পর পুষিয়ে প্রতি তিন দিনে একশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। এখন সমস্যা হলো ক্ষতি পোষানো যাছ্ছে না ফলে আমার জন্য একশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়া চার দিনের রাস্তা হয়ে গেলো।
মার্চ এর দশ তারিখ তখন কুমিল্লা ময়নামতি শালবহনবিহার দেখছিলাম। আমার সাথে সকাল বেলায় এসে যোগ দিয়েছেন স্বনামধন্য ফটোগ্রাফার ফোকাস ফ্রেম এর রুহুল কুদ্দুছ ছোটন, সামাজিক কাজের জন্য পাগলামন বড়ভাই ডট কম এর মোহাম্মদ আশরাফ আলী। দর্শনার্রাথীরা আনন্দবিহারকে বোতল চিপসের প্যাক আর টিস্যু পেপার ফেলে নোংরা করছিলো। কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম যে, কেন তারা এমনটা করছেন। তারা খুব স্বতস্ফুর্তভাবে জানালো যে, যেহেতু প্রতিদিন এটা পরিষ্কার করা হয় তাই অপরিষ্কার করতে কোনো সমস্যা নেই। পৃথিবীটাকে নোংরা করার এই অদ্ভূৎ যুক্তি এটা মনে হয় কেবল এখানেই চলে। পরে আমরা কিছুক্ষণ এটা পরিষ্কার করি।
আমি সাধারণত হোটেল বা গেষ্ট হাউসে রাতে থাকি। সরকারী বাংলা বা গেস্টহাউসে থাকা যায়, আমার আদর্শ উদ্দেশ্য এবং পর্যটন কর্রেশন এর চিঠি দেখালো সৌজন্যমূলক থাকা যায়। কিন্তু খুব বেশী দিন সে সু্বধিা গ্রহণ করিনি। কারণ দৈনিক ৩০ ৩৫ কিলোমিটার হাটার পর আমার আর এসব নিয়ে দৌড় ঝাপ বা আরো ২ ঘন্টার তদবির ভালো লাগে না। তো আমি জানতাম যে কুমিল্লা বার্ড এ থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। পেমেন্ট দিয়ে নিয়ম মাফিক থাকা যায়। সেজন্য আগে যোগাযোগ করিনি। হোস্টেল রিসিপশনে গিয়ে ধাক্কা খেলাম এখন রাত আটটা বাজে তিনি আমাকে রুম দিতে পারবেন না। অফিস টাইমে হলে হতো কারণ তখন হোস্টেল সুপার ছিলেন। বেশ এখন তাহলে হোস্টেল সুপারকেই বলি। কিন্তু তাকে ফোনে পাওয়া গেলনা। সাবেক কর্মচারী সমিতির চেয়ারম্যান ফোনে সুপারিশ করলো তাতেও কাজ হলো না।
ওরে বাবা এটাতো সরকারীর চেয়েও হ্যাপা। তারপর ডাইরেক্টর ট্রেনিংকে বলে থাকার ব্যবস্থা হলো এজন্য ফরম পূরণ অঙ্গীকার আর সময় গেলা প্রায় পৌনে ১ ঘন্টা। ভাবলাম মনে হয় ফ্রি কিংবা ছাড় মুল্যে নইলে এত তদবির করতে হলো কেন? সকালে দেখলাম পাঁচশো টাকার একটা বিল ধরিয়ে দিলো। না কিছু বলিনি। আমরাতো আর ফ্রি থাকার জন্য চাইনি। পয়সা দিয়েই থাকতে চেয়েছিলাম। হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারতাম ভাই পয়সাই যদি নেবেন তাহলে এত তদবির সুপারিশ এর কেন প্রয়োজন হলো? আর এতো অপেক্ষা। বললাম না এজন্য আমার কাছে মনে হয় যতো অভিযোগ কম করা যায় ততই শান্তি। এজন্য অনেক জায়গায় অনেক কিছু দেখেও চুপ থাকি। আমারতো একটা ভরসা আছে একদিন দু কলম লিখতে পারবো। কারো সাথে সামনা সামনি আর্গুমেন্ট করলে লোকে নিতে চায়না।
আমার অন্তত তাই মনে হয়।
যাইহোক পরদিন আমরা ড, আখতার হামিদ খান প্রতিষ্ঠিত পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বিহার, মুড়া দেখে লাঞ্জের পর আবার রওনা দিলাম ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের গাড়ির তর্জন গর্জন এর মধ্য দিয়ে সুয়াগাজী এসে বিশ্রাম নিলাম। সুয়াগাজি বাজার আসার আগেই একটি ছোট তিন রাস্তার মোড়ে ২১ রুমের একটি বোডিং পেলাম। যার বেশীরভাগ রুম বুকড তবে আমি একটা পেলাম। পরের দিন চলতি পথে সকাল হাইওয়ে রেস্টুরেন্টসহ কয়েকটি হোটেল পেলাম। এগুলোতে ৫/৭টি করে কক্ষ । কক্ষগুলো কেমন তা দেখার জন্য কোথাও খালি পেলাম না। মূলত হাইওয়ের পাশে প্রচুর শিল্প কারখানা তৈরী হছ্ছে যেগুলোর বেশীর ভাগ হয়তো ঢাকার কোনো কোম্পানীর। ফলে এই রুমগুলো বুকড থাকে।
পরেরদিন মিয়াবাজার কুমিল্রা চৌদ্দগ্রাম হয়ে চৌদ্দগ্রামের শেষ মাথায় ফেণী কাছাকাছি এসে ভিটাওয়াল্ডে রাত্রি যাপন করলাম। মজার ব্যাপার হলো এখানকার তেরটি কক্ষের মধ্যে গেস্ট শুধু একজন সে হলো আমি। আমি একাকীত্বকে উপভোগ করতে পারি। সূতরাং পুরো রিসোট এ একা থেকেই উপভোগ করলাম।
আমি নিয়মিত আমার ফেসবুক আপডেট দিতে পারছিলাম না। কখনো ক্লান্তি কিন্তু একয়দিন ইচ্ছে করে দিলাম না। আমি কখন কোথায় আছি এটা পাবলিক হয়ে গেলে নিরাপত্তা ঝুকিতে পড়তে পারে বলে মনে হলো।
ফেণী আমার নিজের জেলা। আজ এটা সবাই জানেন। আমার এই সফরে তিনটি বিষয় খুব বেশী প্রচার পেয়েছে প্রথমত হলো সরকার। মানে মানুষের এক কথা সরকার আমাকে এই ধরনের কাজের দায়িত্ব দিয়েছে হেঁটে হেঁটে দেশ দেখা। এটা এক ধরনের ট্রেনিং বা চাকরী। আর সরকার মানে বাংলাদেশ পর্যটন কর্রেপারেশন কারণ করপোরেশন এর লোগো ছিলো আমার সাথে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের লোকেরা জিজ্ঞেস করার আগেই ধরে ন্য়ে। এই আকাম সরকার ছাড়া আর কারো নয়।
দ্বিতীয় আমার প্লেকার্ড এবং টি শার্টএ যেহেতু একটি অভিন্ন কোম্পানীর লোগো রয়েছে। তো মানুষ বুঝে যে এর পেছনে একটি কোম্পানী রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিন অঞ্চলের মানুষ দেখে বুঝে যায় ‘‘ ও আপনাকে একটি কোম্পানী স্পন্সর করেছে’’ আর কেউ যদি খেয়াল না করে তাহলে সে এমনিই বলে বসে আপনার স্পন্সর কে? ফলে ট্যুর ডট কম ডট বিডির ব্যাপক প্রসার হয়েছে।
আর তৃতীয়ত হলো ফেনী। কেউ যদি আমাকে না বুঝে প্রশ্ন করে তাহলে সে জানতে চায় আমার মিশনটা কি? আর কেউ যদি বুঝে যায় তার প্রথম প্রশ্ন আমার বাড়ী কোথায়? যে প্রথম মিশন জানতে চায় তার দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো আমার দেশ কোথায়? খুব কম লোকই আমার নাম জানতে চেয়েছিলো। আর কোথাও আমার নামটা লেখাও ছিলো না। প্লেকার্ড কিংবা লিংককার্ডেও্র না।