সদর দরজা
**বার্মার সাথে আঞ্চলিক দুই শক্তিধরের কি সম্পর্ক ও স্বার্থ, তা কি সরকারের অজানা?**
একটি দেশ চালানোর জন্য দেশের ভিতরে এক শ্রেণীর দক্ষ লোক যেমন দরকার, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড যাতে নির্বিঘ্নে চলতে পারে।অপরদিকে দেশের বাহিরে-ও কিছু লোক দরকার যারা পররাষ্ট্র বিষয়ক ব্যাপারগুলো দেখাশুনা করবে। উভয়ক্ষেত্রেই দক্ষতার বিকল্প নেই। কিন্তু সার্জন বলেই হার্ট সার্জন দিয়ে যেমন, নিউরো সার্জারির কাজ চলে না, তেমনি দলীয় নিয়োগ বিবেচনা করে পছন্দের মানুষ এখানে সেখানে বসিয়ে দিলেই যে উৎকৃষ্ট মানের কর্ম হবে, তা আশা করা ভুল। যাকেই যেখানে পোস্টিং দেয়া হোক না কেন, তিনি কি সেই কর্মের জন্য দক্ষ? যদি দক্ষ না থাকেন, তবে তাকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে না বসিয়ে দক্ষতাসম্পন্ন কারোর অধীনে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দেয়া যেতে পারে।
দেশের বাহিরে পররাষ্ট্র বিষয়ে দক্ষ লোক না বসালে কি কি ক্ষতির সম্মুখীন দেশ হতে পারে, বর্তমান সংকট এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এখন কূটনৈতিক ব্যর্থতার জন্য অপর দেশের ঘাড়ে সকল দোষ ঢেলে দিয়ে সরকার যদি নিজেদের দোষ হালকা করার জন্য জনগণের আই-ওয়াশ করতে চায়, সেই চালাকি দ্বারা মহৎ কিছু লাভ হবে না। যে সকল দেশের উপর দোষ ঢালা হচ্ছে, তাদের কানে কি যাচ্ছে না? সুতরাং এখানেই একটি গ্যাপ সৃষ্টি হচ্ছে। সেই গ্যাপ হয়ত আরও প্রতিবন্ধক হয়ে আসতে পারে।
বার্মার সাথে আঞ্চলিক দুই শক্তিধরের কি সম্পর্ক ও স্বার্থ, তা কি সরকারের অজানা? সেই স্বার্থের কারণে এরা কে কি করবে বা করবে না, তা-ও সরকারের নখ-দর্পণে থাকা উচিত। সরকার অস্বীকার করতে পারবে না। দেশের সাধারণ মানুষ আকাশ-কুসুম চিন্তা করতেই পারে। প্রতিবেশী দেশের মৌনতায় মনঃক্ষুন্ন হতে পারে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশের নিকট বার্মা ও বাংলাদেশের স্বার্থ সমান। বরং বার্মা আগামীদিনের জন্য ভারতের বড় বিনিয়োগের দেশ। শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং আরও নানা প্রজেক্টে বিনিয়োগের জন্য চায়নার সাথে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে। এমতবস্থায় ভারত কখনও চায়নার মুখোমুখি, কিংবা চায়না কখনও ভারতের মুখোমুখি হবে না। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে এদের কেউ কাউকে খুঁচাবে না। কেউই বার্মা সরকারের বিরাগভাজন হতে চাইবে না।
দেশের মানুষের নিকট আরেক দুটো দেশের নীরবতা আশ্চর্যের মনে হচ্ছে। মানে পাকিস্তানের নীরবতা! পাকিস্তান কোন্ মুখে বার্মার সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করবে? তার নিজের দেশে মানবাধিকারে চিত্র কি? নিজেরাই হাজার সরকার বিরোধী সন্ত্রাসী মারে এবং কতিপয় সন্ত্রাসী দলকে পোষে। এ প্রমাণ আছে বিশ্বময়। তা ছাড়া বেলুচিস্তান নিয়ে যে অত্যাচার করেই চলেছে, পাকিস্তানের পক্ষে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নাক গলানোর সুযোগ নেই। বার্মা পালটা অপমান করবে। গোটা বিশ্বে কোনঠাসা হয়ে এসেছে পাকিস্তানের অবস্থান। কেউ আর খয়রাত মানে ভিক্ষা দেয় না। হাওলাত-ও পায় না। একমাত্র চাংকু-ব্রাদার্স মানে চাইনীজ-ই এদের বর্তমান অবলম্বন। সেই চীন যখন আছে বার্মার প্রাক্তন সামরিক গোষ্ঠীর পিছনে, তা জেনে কি করে চীনের বিপক্ষে দাঁড়াবে? তাদের শেষ আশ্রয় কি নিজেরাই নষ্ট করবে? ছুন্নীদের অভিভাবক সৌদি কেন নীরব? এ প্রশ্ন-ও জনমনে। কোন্ মুখে সৌদি মানবতা বিরোধী অপরাধে গলাবাজি করবে? বার্মা যদি বলে, ইয়েমেনে কি মানবাধিকার রক্ষা করেই ত্রিশ হাজার কতল করেছ? তখন জবাব কি?
বাংলাদেশ যদি শক্তিশালী দেশ হত, ধরা যাক চীন বা ভারত গরীব দেশ, রোহিঙ্গা সমস্যা তাদেরকে আক্রমণ করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কি নিজের সর্বনাশ করে, শত শত কোটি ডলারের বিনিয়োগকে তুচ্ছ করে সমস্যাতে আগ বাড়িয়ে নাক গলাত? সকল সময় অপরের সমস্যা নিয়ে মাতব্বরী দেখানোর আগে, নিজের উপরে এনে বিচার করতে হয়। অমুকের তমুকের স্থলে আমি হলে কি করতাম? তখন কিছুটা হলেও বোধোদয় হয়। নতুবা আবালের মতো চেঁচামেচি-ই হয়। যা শুধুই অর্থহীন।
মূল কথায় ফিরে যাওয়া যাক। রোহিঙ্গা নিয়ে ভারত চীন পাকিস্তানের যে সকল স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির উল্লেখ করা হলো, তা বাস্তব। আর এই বাস্তবতাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করার জন্য সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর ও কূটনৈতিকদের অনভিজ্ঞতাকে যথেষ্ট দায়ী করা যায়। কার নিকট থেকে কতটা সহযোগিতা পাওয়া যাবে, তার নিকট ততটা আশা করাই যৌক্তিক। কেউ কারো স্বার্থ সহজে জলাঞ্জলি দিতে চাইবে না। বাংলাদেশ-ও অপরের ক্ষেত্রে নিজের স্বার্থ আগে বিবেচনা করবে।
- ক্যাটেগরি:
- বিশ্বজিৎ বৈদ্য-এর ব্লগ
- ৩৬৩ বার পঠিত
Twitter-এ প্রকাশ করুন
বুঝলাম । এখন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কি ? শুধু সরকারের সমালোচনা করলে তো আর সব ঠিক হয়ে যাবে না ।
----------------------------------------------------------
''কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো''
আমার সোনার বাংলা ।